আজ সেই ভয়াল ৩ মার্চ  ৬ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

0

বগুড়া প্রতিনিধিঃ রবিবার সেই ভয়াল ৩ মার্চ। মানবতা বিরোধী অপরাধে আমৃত্য দণ্ডিত জামায়াত নেতা ‘দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে’ এই গুজব রটিয়ে তার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার লোককে রাস্তায় নামিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিল বগুড়ার নন্দীগ্রাম।
সেই ভয়াবহ তাণ্ডবের ষষ্ঠ বর্ষপূতি আজ।
সেই ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত জামায়াত-শিবিরের ৬৪৪ জনকে অভিযুক্ত করে ৪টি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকা ব্যয়ে ছয়তলা (৬তলা) বিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। পাশাপাশি পাল্টে গেছে পরিষদের ধ্বংসযজ্ঞ চিত্র।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ‘দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে’ এই গুজব রটিয়ে তার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার লোককে রাস্তায় নামিয়ে উপজেলা পরিষদে দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে ১৬টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এতে সেই সময় পৌর এলাকা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। উপজেলা পরিষদের বিশাল এলাকা ছিল এক বিরানভূমি।
উপজেলা পরিষদ কমপেক্সে থাকা দোতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষের আসবাব আর নথিপত্র পুড়ে ছাইয়ের স্তুপ হয়েছিল। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছিল। বিভিন্ন কক্ষের টেবিল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, টেলিফোনসেট, ফ্যাক্স মেশিন, সরকারি সব নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সেই ছাইয়ের মধ্যেই রয়েছিল উপজেলার সব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত রেকর্ড বই, বিভিন্ন সরকারি মামলা, ঋণ, নকশা, ভাউচারসহ সবকিছু। তখন থমকে যায় অফিসের সকল কার্যক্রম। সেই সঙ্গে নেমে আসে স্থবিরতা। এখনো ক্ষতিগ্রস্থ ভবনের ক্ষত যেন মনে করিয়ে দেয় সেদিনের সেই বিভীষিকার কথা।
সেই তাণ্ডবে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়। এছাড়া হামলা চালানো হয় থানাসহ তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ’র বাড়িসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি ও অফিসে।
এই সব ঘটনায় থানায় পৃথক পৃথক ভাবে ৪টি মামলা হয়। সেই সব মামলায় নন্দীগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল, সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলামসহ ৬৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মামলার আসামীরা অধিকাংশ জামিনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ও নন্দীগ্রামে এ ধরনের বর্বরতা বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেনি। যা ২০১৩ সালের এই দিনে ঘটেছিল।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, মামলায় নন্দীগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল, সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলামসহ ৬৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মামলার বাদীর রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, ‘দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে’ এই গুজব রটিয়ে আমার বাড়িতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করে। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহন চলছে।

Leave A Reply