- আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী রতনের মৃত্যু জানাযায় নেতার কান্নায় শোকে শিহরিত জনতা - September 21, 2023
- মতলবে ভাগিনার হাতে মামা খুন - September 20, 2023
- ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত ইউএনও’র সাথে অনলাইন প্রেসক্লাবের মতবিনিময় - September 20, 2023

সেলিম রেজা, স্টাফ রিপোর্টারঃ দৃষ্টিশক্তি নেই। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাকেও ঘৃণার চোখেই দেখেন মহিদুল। আর তাই সংসার চালানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেছে নিলেন গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছ পরিষ্কার করার কাজ। আর এভাবেই এখন নিজের মানসিক শক্তির জোরে সংসার চালান দৃষ্টিশক্তিহীন মহিদুল।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের লফিজ প্রামাণিকের সন্তান মহিদুল। মাত্র তিনবছর বয়সে চোখের রোগে দৃষ্টি শক্তি হারাতে হয় তাকে। আর্থিক অভাবের কারণে পরবর্তীতে চেষ্টা করলেও আর সম্ভব হয়নি উন্নত চিকিৎসা। ফলে চিরতরে অন্ধত্ব বরণ করতে হয় তাকে।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেই হারাতে হয় মাকে। বাবাও বরণ করে পঙ্গুত্ব। অন্ধের অবলম্বন হিসেবে বিয়েও করেন একসময়। সংসারে আসে নতুন অতিথি। এক ছেলে ও এক মেয়েসন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। সংসারের খরচ যোগাড় করতে কাজ খুঁজতে থাকেন মহিদুল। কিন্তু দৃষ্টিহীনতার কারণে কেউ কাজ দেয় না। তাই ঘৃণা করলেও একসময় শুরু করে ভিক্ষাবৃত্তি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাকেও ঘৃণার চোখেই দেখতেন মহিদুল। একসময় ভাবেন ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে অন্য কিছু করার কথা। অভাব-অনটন দূর করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেছে নেন গাছ পরিষ্কারের কাজ। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছ পরিষ্কার করার শুরু করে মহিদুল। গাছ প্রতি ৫০ টাকা নিয়ে দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ পরিষ্কার করে দিনে ২০০-৩০০ টাকা উপার্জন শুরু করেন সে। এইভাবেই এখন চলছে তার সংসার।
অন্ধ মহিদুল জানান, তার স্ত্রী হাত ধরে গাছের গোড়ায় নিয়ে যান তাকে। সেখানে কাঁধে দা রেখে একটু চাপ দিয়ে তিনি গাছে উঠতে থাকেন। গাছে উঠতে গিয়ে হাত ও পায়ের সঙ্গে কোনকিছু লাগলেই মনে করেন এটা গাছের শাখা-প্রশাখা। তখনই সেটা কেটে ফেলেন। এভাবেই গাছ পরিষ্কার করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন।
দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও ভিক্ষাবৃত্তিকে সামাজিক ব্যাধি মনে করেন মহিদুল। আর সেই কারণেই ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নিজের চেষ্টাতে কাজ করে সংসারের খরচ চালান বলে জানান তিনি।
অল্প বয়সে অন্ধত্ব বরণ করলেও ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে না নিয়ে নিজের কর্মশক্তি দিয়ে সংসার চালানো মহিদুলের মানসিক শক্তিকে এক অনন্য নজির বলে মনে করে এলাকাবাসী।
পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া মহিদুল চেষ্টা করে যাচ্ছে তার করা কাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তার এই কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন ইতিমধ্যেই মহিদুলের প্রতিবন্ধী ভাতারও ব্যবস্থা করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবাইদুল হক জানান, আগামীতে মহিদুলকে সরকারি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করা হবে।